চেপে রাখা ইতিহাস - বার্তা প্রকাশ

চেপে রাখা ইতিহাস

ছবিটি, বাংলার প্রথম মুহাদ্দিস “শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (রহঃ) “কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সোনারগাঁও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। আসুন নিজেদের ইতিহাস জানি,,,,,,,,,

১৩৭২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সালতানাতে মামলুক আমলে তৎকালীন ফুসতাত নগরী বর্তমান কায়রোতে জন্মগ্রহণ করেন আমীরুল মু’মীনিন ফিল হাদীস, উসূলে হাদিসের ইমাম, ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)। সেই বিখ্যাত ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর জন্মের ১০০ বছর পূর্বেই তথা ১২৭২ সনের দিকে এই বাঙলায় পবিত্র হাদীসের দরস হতো, ছাত্র সংখ্যা হতো ১০ হাজারের মতো! সুদূর বোখারা, কান্দাহার, খোরাসান, সিরিয়া, ইয়েমেন, বিহার ও দাক্ষিণাত্যের ইলম পিপাসুদের দৌড়ঝাঁপ ছিল আজকের এ বাঙলায়! হাদীসের মসনদে বসতেন বাঙলার প্রথম মুহাদ্দিস শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (রহ.) হাদীস পড়াতেন বুখারী, মুসলিম ও মুসনাদে আবু ইয়ালার মতো বিখ্যাত সব গ্রন্থ থেকে ।

আপনি ভাবলে ভুল করবেন যে, আবু তাওয়ামার এই বিশ্ববিদ্যালয় মনে হয় বর্তমান মাদ্রাসার মতো ছিল! বরং এটি ছিল একটি অঘোষিত দূর্গ ! বিদ্যালয়ের ছিল নিজস্ব নৌবাহিনী, প্রবল ও অপ্রতিরোধ্য বাহিনী। ছাত্ররা ইলমচর্চার পাশাপাশি ছিল বাঙলার জনগণের নিরাপত্তার অতন্দ্রপ্রহরী। পড়ানো হতো অধিবিদ্যা, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, আইনশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, ইতিহাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান, নৌবিদ্যা, ভেষজশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, ভূগোলশাস্ত্র, রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞান কিংবা দর্শনশাস্ত্রসহ সকল ধরনের বিজ্ঞান।

এই মহান আলেম যখন এই বাংলায় হাদীস পড়ান তখন দামেশকে চলে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর দরস, স্পেনের কার্ডোভায় চলে ইমাম কুরতবী (রহ.)-এর দরস, তখনও ইমাম যাহাবী (রহ.) ও ইমাম ইবনে কাইয়্যেম (রহ.)- এর মতো অসংখ্য জ্ঞানসমুদ্রের জন্ম হয়নি !

শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামার সেই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য আজও সোনারগাঁয়ে হাজার বছরের চাপা ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেই কেবল সেকালের পাঠদান।

শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার লেখা “মনজিলে মাকামাত” গ্রন্থটি সুফি দর্শনের ওপর প্রাচীন বাংলায় লিখিত একটি উল্লেখযোগ্য ইসলামী দর্শন গ্রন্থ বলে মনে করা হয়। তবে এ গ্রন্থটির কোনো কপি পাওয়া যায়নি। এছাড়া সোনারগাঁ বিদ্যাপীঠে অবস্থানকালে আবু তাওয়ামা ছাত্রদের উদ্দেশে যে ফিকহ বিষয়ক বক্তৃতা দিতেন, এ বক্তৃতাগুলোর সংকলনগুলো নিয়ে ফার্সি ভাষায় রচিত “নামায়ে হক” নামে একটি গ্রন্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই বইতে ১৮০টি কবিতা রয়েছে। গ্রন্থটি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাই থেকে এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে কানপুর থেকে প্রকাশিত হয়।

শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা রহ: ছিলেন প্রখর চিন্তাশক্তির অধিকারী। তাঁর মৌলিক চিন্তা ও দর্শনের প্রভাব বাঙালি মুসলমান সমাজে আজো আলোক বিকিরণ করছে।

মহান আল্লাহ যেনো ইসলাম বিশেষ করে ইলমে হাদিসের একনিষ্ঠ নিবেদিত খাদিম হযরত শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (রহঃ)এর দরওয়াজা বুলন্দ নসিব করেন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *